আমাদের দেশের মুসলিম সমাজে কাউকে কাউকে বলতে শোনা যায় “পায়ে সোনার নুপুর বা সোনার অলংকার পরা জায়েজ নাই”। কেউ কেউ আবার বিশ্বাস করেন পায়ে স্বর্ণ পরা হারাম। আসলেই কি তাই? আজকে এ বিষয়টি নিয়ে জানব ইনশাআল্লাহ।
স্বর্ণ একটি মূল্যবান ধাতু। নারীদের জন্য অলংকার হিসাবে এর ব্যবহার বৈধ আর পুরুষদের জন্য হারাম। স্বর্ণ দিয়ে তৈরি অলংকার হাত, পা, কান, গলা যে কোনো জায়গায়ই ব্যবহার করা যেতে পারে। ইসলামী শরিয়তে পায়ের অলংকার হিসাবে স্বর্ণ ব্যবহারে কোনো বিধিনিষেধ নাই। নারীগণ পায়ে সোনা বা রূপা উভয় ধাতুর তৈরি নুপুর বা অলংকার (যাতে শব্দ হয় না এবং নন-মাহরামদের সামনে সৌন্দর্য প্রকাশক নয় এমন অলংকার) ব্যবহার করতে পারবেন। যারা স্বর্ণকে পায়ে পরিধান করা নাজায়েজ বা হারাম বলেন তারা ভুল বলেন। কোনো বিষয় হারাম হওয়ার জন্য শর্ত সাপেক্ষে কুরআন বা হাদীসের দলিল প্রয়োজন হয়। হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল মনে করা কুফরি। তাই কোনো বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে আমরা যেন হালাল-হারামের ঘোষণা না দেই। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
ইসলামী শরীয়তে পায়ে স্বর্ণ পরার ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও, হিন্দু ধর্মে স্বর্ণ পায়ে পরা তাদের ধর্মীয় দৃষ্টিতে নিষেধ। স্বর্ণকে তারা লক্ষ্মী বলে থাকেন। তারা লক্ষ্মীকে পায়ে পরাকে অশোভন মনে করেন। তারা বলেন স্বর্ণের অলংকার তাদের পূজার প্রতিমার গায়ে পরানো হয়। এজন্য হিন্দু ধর্মাবলম্বীগণ স্বর্ণকে পায়ে পরিধান করা অনুচিত মনে করেন।
হিন্দু ধর্মের এই ধর্মীয় রীতিটি কোনো ভাবে আমাদের মুসলিম সমাজেও প্রচলন হয়েছ। এই রীতির আলোকে অনেক মুসলিম ব্যক্তিও পায়ের অলংকার হিসাবে স্বর্ণের ব্যবহার নিষেধ, অনুচিত, নাজায়েজ বা হারাম মনে করেন।
তাই আসুন, আমরা পায়ে স্বর্ণ ব্যবহার করি বা না করি, স্বর্ণ পায়ে ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়ে অন্য ধর্মের ধর্মীয় বিধানকে ইসলামের বিধান বানিয়ে না ফেলি। আলেমদের তত্ত্বাবধানে থেকে কুরআন-হাদীসের আলোকে ইসলাম বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন ও চর্চা করি। সমাজের প্রচলিত কথা, মুরুব্বিদের বক্তব্যকে ইসলামের দলিল না বানাই। চেষ্টা করি ভুলগুলোকে প্রতিনিয়ত শুধরে নিতে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক দীন শিক্ষা ও দীন চর্চার তৌফিক দান করুন। আমীন।